সাটুরিয়ার ভয়াল টর্নেডো: ৩৬ বছর পরও কাঁদে ইতিহাস
আজ ২৬ এপ্রিল, সাটুরিয়ার ইতিহাসের এক শোকাবহ দিন। ১৯৮৯ সালের এই দিনে পৃথিবীর অন্যতম ভয়াবহ টর্নেডোর আঘাতে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় ঘটেছিল ধ্বংসের বিভীষিকা। আজ সেই হৃদয়বিদারক ঘটনার ৩৬ বছর পূর্তি। ৩৬ বছর আগে এই দিনে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় নেমে এসেছিল ইতিহাসের এক ভয়াল দিন। ১৯৮৯ সালের ২৬ এপ্রিল বিকেলে বয়ে যাওয়া ধ্বংসাত্মক টর্নেডো মুহূর্তের মধ্যে শেষ করে দিয়েছিল হাজারো জীবন, স্বপ্ন আর সুখের সংসার।
এখনও এই দিনটি এলেই আতঙ্ক আর কান্নায় ভিজে ওঠে সাটুরিয়ার মানুষ। মাত্র কয়েক মিনিটের তাণ্ডবে সাটুরিয়ার প্রাণ হারায় প্রায় ১,৩০০ মানুষ। আহত হয় অন্তত ১২ হাজার এবং প্রায় এক লাখ মানুষ হয়ে পড়ে গৃহহীন। উপজেলার ২০টি গ্রামের কয়েক হাজার ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, বাজার, স্কুল-কলেজ, সরকারি স্থাপনা ও হাজার হাজার গাছপালা একেবারে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়।
বিশেষ করে দুই শতাব্দী পুরনো সাটুরিয়া বাজার সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। সেদিনের ভয়াল স্মৃতিচারণ করে সাটুরিয়া বাজারের প্রবীণ ব্যবসায়ী মো. পিয়ার আলী বলেন,"সকাল থেকেই প্রচণ্ড গরম ছিল, বাতাসের কোনো অনুভূতিই ছিল না। বিকাল ৫টার দিকে হঠাৎ আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রবল শব্দে ধেয়ে আসে সেই বিভীষিকাময় টর্নেডো। মুহূর্তেই সবকিছু ধূলিসাৎ হয়ে যায়।" তিনি আরও জানান,"আমি নিজেও মাথায় গুরুতর আঘাত পাই। বহুদিন বিছানায় পড়ে ছিলাম। প্রতিবছর ২৬ এপ্রিল এলেই সেই ভয়ঙ্কর দিনটির দৃশ্য এখনো চোখের সামনে ভেসে ওঠে।" আরেকজন স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন,"আমরা চোখের সামনে দেখেছি কীভাবে পুরো গ্রামটা ধ্বংস হয়ে গেল। মানুষজন কাঁদছিল, আর্তনাদ করছিল, কেউ কেউ প্রিয়জনের খোঁজে ছুটছিল ধ্বংসস্তূপের মাঝে।
" টর্নেডোটি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে অনেকে কয়েকশ মিটার দূরে ছিটকে পড়েন। বহু পরিবার পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, কয়েক হাজার বাড়িঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়, প্রায় ৪০০ দোকানপাট উড়ে যায়, সরকারি খাদ্য গুদামসহ বহু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারি তথ্যমতে, এটি ছিল ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী এবং প্রাণঘাতী টর্নেডোগুলোর একটি। টর্নেডোর পরপরই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবী দল ও সরকার ব্যাপক উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। পুনর্বাসন কার্যক্রমও চালানো হয়, তবে হারানো প্রাণ আর ফিরে আসেনি। প্রায় ৪০০ দোকান সম্পূর্ণ ভেঙে যায়, সাটুরিয়ার সরকারি খাদ্য গুদামসহ গুরুত্বপূর্ণ ভবন ধ্বংস হয়। বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফসলের অপূরণীয় ক্ষতি হয়। বহু পরিবার হারায় তাদের পুরো সদস্য পরিবারকে। সেই সময় সরকারের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবক দল উদ্ধার কার্যক্রম ও পুনর্বাসন কাজে অংশ নেয়। বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ টর্নেডোর তালিকায় স্থান পাওয়া এই দুর্যোগটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হয়ে রয়েছে।
৩৬ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও সাটুরিয়ার মানুষ সেই দিনের ভয়াবহতা ভুলতে পারেনি। স্থানীয়দের প্রত্যাশা, এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় আরও কার্যকর প্রস্তুতি ও সচেতনতা গড়ে তোলা হোক। আজ সাটুরিয়ার বিভিন্ন স্থানে নিহতদের স্মরণে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। একই সাথে দুর্যোগ মোকাবেলায় সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। উল্লেখ্য,১৯৮৯ সালের ২৬ এপ্রিল বিকেল।সাটুরিয়ার আকাশ ধীরে ধীরে কালো হয়ে উঠছিল। বাতাস যেন থমকে গিয়েছিল। আশপাশের প্রকৃতি নীরব। আর ঠিক সেই নিস্তব্ধতা ভেঙে, বিকাল ৫টার দিকে, নেমে আসে এক বিভীষিকাময় দানব—টর্নেডো। মুহূর্তেই যেন সময় থেমে যায়, জীবন থেমে যায়। আজ ৩৬ বছর পরও, সেই দিনের কথা মনে করলেই শিউরে ওঠেন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার মানুষ। আকাশে-বাতাসে তখন শুধুই কান্না আর আর্তনাদ।
প্রচণ্ড ঘূর্ণির শক্তিতে উড়ে গিয়েছিল ঘরবাড়ি, দোকানপাট, গাছপালা, মানুষের জীবন। ১৯৮৯ সালে দেশে দুর্যোগ পূর্বাভাসের অবকাঠামো ছিল না বললেই চলে। জনসাধারণের কাছে আগাম সতর্কবার্তা পৌঁছায়নি। ফলে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল ভয়াবহ মাত্রায়। টর্নেডোর পরে সাটুরিয়ার মানুষ শুরু করে নতুন করে বেঁচে থাকার লড়াই। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতায় শুরু হয় পুনর্বাসন। নতুন করে বাজার গড়ে ওঠে, ঘরবাড়ি বানানো হয়। কিন্তু হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জন, স্মৃতি আর জীবনের স্বপ্নের কোনোটাই ফিরে আসেনি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আজ অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে টর্নেডো-জাতীয় আকস্মিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আরও সচেতনতা এবং আগাম প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সাটুরিয়ার সেই ভয়াল টর্নেডো আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতির সামনে মানুষ কতটা ক্ষণিক, আর বেঁচে থাকার লড়াই কতটা দুর্দান্ত।
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি মো: আরিফুর রহমান অরি
সংশ্লিষ্ট
ফেনীতে বারবার বন্যা: টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবিতে ফেনীর শহীদ মিনারে মানববন্ধনআজ (১২ জুলাই,২০২৫) বিকেল ৩ টায়, ফেনীর শহীদ মিনারে “ফেনী বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণ পরিষদের”র উদ্যোগে এক মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে ফেনী জেলার বিভিন্ন এলাকায় টানা বৃষ্টিপাত ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যা, মানুষের জানমাল ও জীবিকা বিপন্ন হওয়ার প্রেক্ষাপটে টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণের দাবিতে ফেনী প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি এ কে এম আবদুর রহিমের সভাপতিত্বে ও ওমর ফারুক শুভ'র পরিচালনায় এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।মানববন্ধনে "ফেনী বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণ পরিষদ" এর পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করেন ফেনী বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণ পরিষদের অন্যতম উদ্যোক্তা এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক আজিজুর রহমান রিজভী।রিজভী বলেন, অনতিবিলম্বে পাঁচ দফা না মানলে আরো কঠোর কর্মসূচি প্রদান করা হবে। পাচঁ দফা দাবিসমুহ:১. ফেনী জেলা পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলীকে অপসারণ ও শাস্তি দিতে হবে। ২. সরকারের স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প ইমেডিয়েটলি একনেকে পাশ করে বাস্তবায়নের জন্য সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিতে হবে। ৩. প্রতি মাসে ফেনী পাউবো মাঠে গণশুনানির মাধ্যমে জনগনকে বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণ আপডেট জানাতে হবে। ৪. এবারের বন্যার জন্য দায়ী বাঁধ নির্মাণের ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ৫. বল্লা মুখা বাঁধ নির্মান ও মুছাপুর ক্লোজার পুনঃনির্মাণের পাশাপাশি বাঁধ সংরক্ষণের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এবি পার্টির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ইন্জিনিয়ার শাহ আলম বাদল বলেন, টিএসসির অনুদান ও প্রধান উপদেষ্টার তহবিলের টাকা ফেনীর জন্য তুলা হলেও এ টাকা কোন কাজে লাগায় নাই। এ টাকার হিসেব সরকারকে দিতে হবে। শুধু এই টাকা দিয়েও বাঁধের কাজ শুরু করা যেতো।জামায়াতের জেলা প্রচার সম্পাদক আনম আবদুর রহিম বলেন, এ বন্যার দায় কিছুতেই ফেনী জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এড়াতে পারে না। তাই দায়িত্বজ্ঞানহীন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নিতে হবে। জেলা যুবদল নেতা জামাল উদ্দিন গাজী বলেন, আমার টেকসই বাঁধের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকবো। বাঁধ নিয়ে ফেনীর মানুষ আর কোন গড়িমসি চলবে না। প্লাটফর্মের অন্যতম উদ্যোক্তা ইন্জিনিয়ার এনামুল হক আজিম বলেন, রেমিট্যান্স এর দিক দিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জেলা ফেনী হলেও এ জেলার বন্যা, বাঁধ নিয়ে সরকার উদাসীন। আমরা ফেনীবাসী ত্রান নয়, টেকসই বাঁধ চাই।পরশুরামের বাসিন্দা ফেনী এভারকেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর ব্যাবস্থাপনা পরিচালক আবদুল গফুর বলেন, বর্ষাকাল এলেই ফেনীবাসী বন্যার আতংকে থাকে।আমরা এই আতংকের অবসান চাই।প্রতি বছর ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফেনী গুরুত্বপূর্ণ জেলা হওয়ার পর ও এমন পরিস্থিতি কোনভাবেই কাম্য নয়।ফুলগাজীর বাসিন্দা বিশিষ্ট সমাজসেবক আবুল কালাম শামীম বলেন, আমরা ফেনীবাসী ত্রানের কাঙাল না, এমনিতেই ফেনীর মানুষ টাকাওয়ালা। আমরা টেকসই ও স্থায়ী বাঁধ চাই এবং এটা অতিসত্বর করতে হবে। এছাড়াও মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী ও সমাজসেবক সায়েম শিপলু, খেলাফত মজলিসের জেলা নেতা আজিজ উল্লাহ আহমদী, কাজী সালাহউদ্দিন, সোহরাব হোসেন শাকিল, সালাহ উদ্দিন শাওন, জাতীয়তাবাদী প্রজন্ম দল ফেনী জেলা নেতা সুমন পাটোয়ারী, মো: ইদ্রিস আলী, ওসমান গণি জাহিদ, ফ্রেন্ডস ইউনিটি ব্লাড ডোনার ক্লাবের প্রতিনিধি বাপ্পি, এমসি বয়েস ক্লাবের প্রতিনিধি রবিন, তুহিন, মারুফ প্রমুখ । সকল বক্তার একটাই আহ্বান—"প্রকল্প নয়, চাই টেকসই বাঁধ ও স্থায়ী সমাধান!মানববন্ধনে শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং সর্বস্তরের ফেনীবাসী উপস্থিত ছিলেন।
আজ বিকেল ৪ টায়, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে “ফেনী বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণ পরিষদের”র উদ্যোগে এক মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে ফেনী জেলার বিভিন্ন এলাকায় টানা বৃষ্টিপাত ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যা, মানুষের জানমাল ও জীবিকা বিপন্ন হওয়ার প্রেক্ষাপটে টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণের দাবিতে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।মানববন্ধনে ফেনী বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণ পরিষদের আহবায়ক সাইদুল ইসলাম বলেন, “প্রতিবছর এই সময় ফেনীতে পাহাড়ি ঢল ও অপ্রতিরোধযোগ্য পানি প্রবাহের কারণে গ্রামগঞ্জ প্লাবিত হয়, ফসল, ঘরবাড়ি, রাস্তা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। বারবার প্রকল্পের নামে অস্থায়ী ও দুর্বল বাঁধ নির্মাণ করে সমস্যার স্থায়ী সমাধানের পরিবর্তে প্রতিবছর মানুষকে দুর্ভোগের ও ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে হয়।তাই অবিলম্বে ফেনী জেলার নদ-নদী ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় টেকসই বাঁধ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এছাড়াও অনতিবিলম্বে পাঁচ দফা না মানলে আরো কঠোর কর্মসূচি প্রদান করা হবে। আমাদের দাবিসমুহ:১. ফেনী জেলা পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলীকে অপসারণ ও শাস্তি দিতে হবে। ২. সরকারের স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প ইমেডিয়েটলি একনেকে পাশ করে বাস্তবায়নের জন্য সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিতে হবে। ৩. প্রতি মাসে ফেনী পাউবো মাঠে গণশুনানির মাধ্যমে জনগনকে বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণ আপডেট জানাতে হবে। ৪. এবারের বন্যার জন্য দায়ী বাঁধ নির্মাণের ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ৫. নতুন টেকসই বাঁধ নির্মাণের পাশাপাশি বাঁধ সংরক্ষণের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী দিদারুল আলম মজুমদার বলেন, টিএসসির অনুদান ও প্রধান উপদেষ্টার তহবিলের টাকা ফেনীর জন্য তুলা হলেও এ টাকা কোন কাজে লাগায় নাই। এ টাকার হিসেব সরকারকে দিতে হবে। শুধু এই টাকা দিয়েও বাঁধের কাজ শুরু করা যেতো।বিশিষ্ট লেখক ও চিন্তাবীদ ওমর ফারুক বলেন, এ বন্যার দায় কিছুতেই ফেনী জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এড়াতে পারে না। তাই দায়িত্বজ্ঞানহীন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নিতে হবে। ইন্জিনিয়ার এনামুল হক আজিম বলেন, রেমিট্যান্স এর দিক দিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জেলা ফেনী হলেও এ জেলার বন্যা, বাঁধ নিয়ে সরকার উদাসীন। আমরা ফেনীবাসী ত্রান নয়, টেকসই বাঁধ চাই।এছাড়াও মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন আজিজুর রহমান রিজভী, ইমাম উদ্দিন, রাউফু রাসুলুন জ্যোতি, আরিফুল ইসলাম আসিফ, ইমাম আবু জোবায়ের, আবদুর রহিম, তারেক মনোয়ার, ইব্রাহিম, নুরে আলম অপু ও আল আমিন প্রমুখ। সকল বক্তার একটাই আহ্বান—"প্রকল্প নয়, চাই টেকসই বাঁধ ও স্থায়ী সমাধান! মানববন্ধনে শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং ঢাকাস্থ ফেনীবাসী উপস্থিত ছিলেন।
ফেনীসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বিপিসি'র উদ্বেগ প্রকাশ ও জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বানফেনী, নোয়াখালী, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকদিনের টানা ভারি বৃষ্টিপাত এবং ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের কারণে হঠাৎ করে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি এক মানবিক সংকটের জন্ম দিয়েছে। ফেনীর মহুরী, সিলোনিয়া, কহুয়া সহ বেশীরভাগ নদ-নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। বহু ঘরবাড়ি, সড়ক, কৃষিজমি ও জনপদ পানিতে ডুবে গেছে। বিশেষ করে ফেনী জেলার ফুলগাজী, পরশুরামসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে, মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে, এবং বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিচ্ছে। শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।এই পরিস্থিতিতে “বাংলাদেশ পাবলিক কোয়ালিশন- বিপিসি” সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় প্রশাসন এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর প্রতি নিম্নোক্ত জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জোর আহ্বান জানাচ্ছে:১. দ্রুত উদ্ধার অভিযান চালানো:বন্যাকবলিত এলাকায় উদ্ধারকাজ জোরদার করতে হবে। যেখানে সড়কপথ বিচ্ছিন্ন, সেখানে বিকল্প মাধ্যমে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে হবে।২. খাদ্য ও জরুরি ত্রাণ নিশ্চিত করা:ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, বেবি ফুড, ওষুধ ও স্যানিটারি সামগ্রীর দ্রুত ও সুষম বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে। যেন বন্যাকবলিত কোনো এলাকা বা জনগোষ্ঠী ত্রাণ থেকে বঞ্চিত না হয়।৩. স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলা: আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত জায়গা, শৌচাগার, আলাদা নারী ও শিশু কর্নার, নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। পানিবাহিত রোগ ও সংক্রমণ প্রতিরোধে মেডিকেল টিম মোতায়েন করা জরুরি।৪. স্বচ্ছ তথ্য ও সমন্বিত কর্মকৌশল: দুর্যোগকালীন তথ্য ও পরিসংখ্যান জনসাধারণের কাছে স্বচ্ছভাবে তুলে ধরতে হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সব সংস্থা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি করতে হবে যাতে সাড়া দেওয়া দ্রুত ও কার্যকর হয়।৫. পাউবো (ফেনী) নির্বাহী প্রকৌশলী ও ঠিকাদারকে শাস্তি প্রদান: বাঁধ নির্মাণে বিলম্ভ ও অনিয়মের কারনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেনী জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীকে শাস্তি ও অপসারন ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।৬. দীর্ঘমেয়াদি নদী ব্যবস্থাপনা ও প্রতিবেশ নির্ভর নীতিমালা: প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা এলাকা থেকে ঢলে বন্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এই পুনরাবৃত্ত দুর্যোগ ঠেকাতে আন্তঃসীমান্ত পানির ন্যায্য ব্যবস্থাপনা ও পূর্ব সতর্কতা ব্যবস্থাকে বাধ্যতামূলক করা জরুরি। পাশাপাশি জলাধার, খাল ও নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ রক্ষা করতে হবে।৭. টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর বাঁধ ব্যবস্থাপনা: দ্রুত সময়ের মাঝে টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর বাঁধ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। ৮. গণ কমিটি ও গণ শুনানি: ফেনীর বন্যা ও টেকসই বাধঁনির্মাণ কাজের জন্য একটি গণ কমিটি গঠন, কাজের সার্বিক অগ্রগতি জানিয়ে প্রতিমাসে গনশুনানির আয়োজন ও আপডেট জনগনকে অবহিত করা।এই দুর্যোগের সময় আমাদের মানবিক দায়িত্ব সর্বোচ্চভাবে পালন করতে হবে। “বাংলাদেশ পাবলিক কোয়ালিশন” মনে করে, এই সংকট শুধু একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়—এটি একটি নীতিগত পরীক্ষা, যার মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রস্তুতি, জনগণের সহমর্মিতা ও সুশাসনের কার্যকারিতা যাচাই হয়।আমরা দেশের সরকার, সকল জনগণ, সংগঠন ও আন্তর্জাতিক সহযোগীদের প্রতি আহ্বান জানাই—এই সংকট মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হোন, সহায়তার হাত বাড়ান, যেন একটি প্রাণও অনাহারে না থাকে, যেন একটিও পরিবার বিনা আশ্রয়ে না থাকে।বাংলাদেশ পাবলিক কোয়ালিশন এর পক্ষেসাইদুল ইসলাম ওমর ফারুক ড. শামীম হামিদী মু. আবিদুর রহমান রাবেয়া আক্তার আবদুল আজিজ সাঈদ আহমেদ সরকার
মহান মে বিদস উপলক্ষে ‘অনিন্দ্য সমাজ গড়তে আমাদের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা, ‘বাসপ পুরস্কার’-২০২৫ প্রদান ও কবিতা আবৃত্তি অনুষ্ঠান হয়ে গেলো ১০ মে ২০২৫, শনিবার, সন্ধ্যা ৬ টায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক তথ্য সচিব ও বাসপের প্রধান উপদেষ্টা সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ। প্রধান আলোচক হিসেবে ছিলেন: লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) মহসিন আলী খান পিএসসি। সভাপতিত্ব করেন সংগঠক ও নির্মাতা কবি রানা হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. ইঞ্জিনিয়ার এম শাহ্ আলম, তরুণ রাজনীতিবীদ শামীম রেজা, অভিনেত্রী ইসরাত জাহান। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন: কবি শান্তনা মিঠু ও গাজী জাকির হোসেন।‘বাসপ পুরস্কার’-২০২৫ পেয়েছেন তারা হলেন : ড. ইঞ্জিনিয়ার এম শাহ্ আলম (বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সমাজসেবক), মহসিন আলী খান (সংস্কৃতি সেবক), টুটুল চৌধুরী (অভিনেতা), মোঃ তজিরুল ইসলাম (নজরুল সংগীত শিল্পী), নুরুন নাহার রীনা (কবি ও সাহিত্যিক), জাফরীন ফেরদৗসী (শিক্ষক ও সংগীতশিল্পী), সিনিগদা হোসেইন (অভিনেত্রী), মোঃ হারুন অর রশিদ (বিশিষ্ট দলিল লেখক), আফসার আশরাফী (কবি), যোসেফ হালদার (কবি ও সাহিত্যিক), মোঃ মঈন (শিশুশিল্পী)।শুরুতেই পবিত্র কোনআন তেলাওয়াত: মৃদুল ইবনে হোসেন। আবৃত্তি পরিবেশন করেন টুটুল চৌধুরী, রাহিমা আক্তার নীপা, গাজী জাকির হোসেন, শামীম রেজা। অনুষ্টান উপস্থাপনা করেন যাইন খান প্যারিস।