ফেনীসহ দেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বিপিসি'র উদ্বেগ ও জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান
ফেনীসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বিপিসি'র উদ্বেগ প্রকাশ ও জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বানফেনী, নোয়াখালী, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকদিনের টানা ভারি বৃষ্টিপাত এবং ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের কারণে হঠাৎ করে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি এক মানবিক সংকটের জন্ম দিয়েছে। ফেনীর মহুরী, সিলোনিয়া, কহুয়া সহ বেশীরভাগ নদ-নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। বহু ঘরবাড়ি, সড়ক, কৃষিজমি ও জনপদ পানিতে ডুবে গেছে। বিশেষ করে ফেনী জেলার ফুলগাজী, পরশুরামসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে, মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে, এবং বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিচ্ছে। শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।এই পরিস্থিতিতে “বাংলাদেশ পাবলিক কোয়ালিশন- বিপিসি” সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় প্রশাসন এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর প্রতি নিম্নোক্ত জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জোর আহ্বান জানাচ্ছে:১. দ্রুত উদ্ধার অভিযান চালানো:বন্যাকবলিত এলাকায় উদ্ধারকাজ জোরদার করতে হবে। যেখানে সড়কপথ বিচ্ছিন্ন, সেখানে বিকল্প মাধ্যমে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে হবে।২. খাদ্য ও জরুরি ত্রাণ নিশ্চিত করা:ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, বেবি ফুড, ওষুধ ও স্যানিটারি সামগ্রীর দ্রুত ও সুষম বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে। যেন বন্যাকবলিত কোনো এলাকা বা জনগোষ্ঠী ত্রাণ থেকে বঞ্চিত না হয়।৩. স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলা: আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত জায়গা, শৌচাগার, আলাদা নারী ও শিশু কর্নার, নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। পানিবাহিত রোগ ও সংক্রমণ প্রতিরোধে মেডিকেল টিম মোতায়েন করা জরুরি।৪. স্বচ্ছ তথ্য ও সমন্বিত কর্মকৌশল: দুর্যোগকালীন তথ্য ও পরিসংখ্যান জনসাধারণের কাছে স্বচ্ছভাবে তুলে ধরতে হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সব সংস্থা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি করতে হবে যাতে সাড়া দেওয়া দ্রুত ও কার্যকর হয়।৫. পাউবো (ফেনী) নির্বাহী প্রকৌশলী ও ঠিকাদারকে শাস্তি প্রদান: বাঁধ নির্মাণে বিলম্ভ ও অনিয়মের কারনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেনী জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীকে শাস্তি ও অপসারন ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।৬. দীর্ঘমেয়াদি নদী ব্যবস্থাপনা ও প্রতিবেশ নির্ভর নীতিমালা: প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা এলাকা থেকে ঢলে বন্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এই পুনরাবৃত্ত দুর্যোগ ঠেকাতে আন্তঃসীমান্ত পানির ন্যায্য ব্যবস্থাপনা ও পূর্ব সতর্কতা ব্যবস্থাকে বাধ্যতামূলক করা জরুরি। পাশাপাশি জলাধার, খাল ও নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ রক্ষা করতে হবে।৭. টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর বাঁধ ব্যবস্থাপনা: দ্রুত সময়ের মাঝে টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর বাঁধ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। ৮. গণ কমিটি ও গণ শুনানি: ফেনীর বন্যা ও টেকসই বাধঁনির্মাণ কাজের জন্য একটি গণ কমিটি গঠন, কাজের সার্বিক অগ্রগতি জানিয়ে প্রতিমাসে গনশুনানির আয়োজন ও আপডেট জনগনকে অবহিত করা।এই দুর্যোগের সময় আমাদের মানবিক দায়িত্ব সর্বোচ্চভাবে পালন করতে হবে। “বাংলাদেশ পাবলিক কোয়ালিশন” মনে করে, এই সংকট শুধু একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়—এটি একটি নীতিগত পরীক্ষা, যার মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রস্তুতি, জনগণের সহমর্মিতা ও সুশাসনের কার্যকারিতা যাচাই হয়।আমরা দেশের সরকার, সকল জনগণ, সংগঠন ও আন্তর্জাতিক সহযোগীদের প্রতি আহ্বান জানাই—এই সংকট মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হোন, সহায়তার হাত বাড়ান, যেন একটি প্রাণও অনাহারে না থাকে, যেন একটিও পরিবার বিনা আশ্রয়ে না থাকে।বাংলাদেশ পাবলিক কোয়ালিশন এর পক্ষেসাইদুল ইসলাম ওমর ফারুক ড. শামীম হামিদী মু. আবিদুর রহমান রাবেয়া আক্তার আবদুল আজিজ সাঈদ আহমেদ সরকার