× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার
Image

অত্যাচারী রাজা


অত্যাচারী রাজা – শিক্ষামূলক গল্প - Ottachari Raja - Shikkhamulok golpoএক রাজার গল্প শোনো। সে ছিল ভারী অত্যাচারী। সে চাইতো, সে যা বলবে, সবাই তা মেনে নেবে। জি হুজুর বলে তাকে সমর্থন করবে। সে চাইতো, সে দিনকে রাত বলবে, রাতকে বলবে দিন--অমনি মন্ত্রী আর পরিষদরা বলবে, ঠিক হুজুর, ঠিক। সে চাইতো প্রজারা তার নাম শুনেই মাথা নত করবে। রাজার কথা সব সময়ই মেনে নেয়া সম্ভব হতোনা প্রজাদের। যেমন, একবার রাজা প্রজাদের আদেশ করলো, তোমাদের দ্বিগুণ খাজনা দিতে হবে। শুনেই প্রজাদের আর্তনাদ শুরু হয়ে গেলো। অনেকের পক্ষেই দ্বিগুণ খাজনা দেয়া সম্ভব হলোনা। রাজার কোটালরা এসে ধরে নিয়ে গেল তাদের। পাইকারী হারে মৃত্যুদন্ড দেয়া হলো। রাজ্যের বহুলোক প্রাণ হারালো। রাজার অত্যাচারে কেবল যে প্রজা মারা যেতো তা নয়; মন্ত্রী, অমাত্য এবং রাজকর্মচারীদেরও নিস্তার ছিলনা। একজন মন্ত্রী হয়তো মনের ভুলে একটি সত্য কথা বলে ফেললো, রাজার তা পছন্দ হলোনা, অমনি সে তার প্রাণদন্ড দিলো। কারণে অকারণে মন্ত্রী, অমাত্য আর রাজকর্মচারীদের মৃত্যুদন্ড চলতে থাকলো রাজার হুকুমে। ফলে দরবারে মন্ত্রী, অমাত্য আর রাজকর্মচারীদের সংখ্যা কমতে লাগলো। শেষে এমন হলো যে, রাজদরবার অচল হয়ে পড়লো। সব চেয়ে সংকট দেখা দিলে মন্ত্রীর অভাবে। রাজা ঘোষণা দিলো, মন্ত্রী চাই, মন্ত্রী নিয়োগ করা হবে। কিন্তু ভয়ে কেউ মন্ত্রী হবার জন্যে এগিয়ে এলোনা। রাজা প্রহরী পাঠিয়ে দিলে মন্ত্রী খুঁজে আনার জন্যে। ঘোড়া নিয়ে সারা রাজ্যে ঘুরতে লাগলো প্রহরীরা। রাজার ঘোষণা যে শোনে, সে-ই পালিয়ে যায়। কেউ মন্ত্রী হতে চায় না।প্রহরীরা পড়ে গেলো মহা বিপদে। মন্ত্রী নিয়ে রাজার কাছে ফিরে যেতে না পারলে তাদের যে গর্দান যাবে। প্রহরীদের দেখে সবাই যখন সরে যাচ্ছিল, তখন পাওয়া গেলো একটি লোককে। প্রহরীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। লোকটাকে বললো, ভাই, রাজা তোমাকে মন্ত্রী বানাতে চান। এখুনি চলো।লোকটা ছিল মাতাল। সে প্রহরীদের কথায় রাজী হয়ে গেলো। জিজ্ঞেস করলো, আমাকে কি করতে হবে?প্রহরীরা বললো, রাজার সব কথায় কেবল ‘জ্বি হুজুর’ বললেই চলবে। লোকটি ছিল জাতে মাতাল, তালে ঠিক। সে প্রহরীদের কথায় সায় দিয়ে বললো, তা পারবো।প্রহরীরাও প্রাণে বেঁচে গেলো। নতুন মন্ত্রী পেয়ে রাজাতো ভারী খুশী। এমন অনুগত মন্ত্রী তার একটিও জোটেনি। কিছু না বলতেই সে জবাব দেয়, জ্বি হুজুর, ঠিক হুজুর। আগের মন্ত্রীরা রাজার প্রশ্ন শুনে কিছু একটা ভেবে চিন্তে কথা বলতো। নতুন মন্ত্রী ভাবনা চিন্তার ধার ধারে না। সোজা বলে বসে, জ্বি হুজুর, ঠিক হুজুর। রাজা ভাবলো, আহ্, এমন না হলে কি চলে!কিছুদিনের মধ্যেই রাজা বিগড়ে গেলো। মানুষ হত্যার ইচ্ছেটা আবার চাড়া দিয়ে উঠলো তার মাথায়। মন্ত্রীকে হত্যা করার ছুতো খুঁজতে লাগলো সে। রাজা একদিন বললল। চলো মন্ত্রী, আমরা কোথাও থেকে ঘুরে আসি। মন্ত্রী বললো, জি হুজুর, ঠিক হুজুর।রাজা আর মন্ত্রী ঘোড়ায় চড়ে বেড়াতে বের হলো। লোকজন যে যেখানে ছিল ভয়ে পালালো। কি জানি, পাগলা রাজা আর মাতাল মন্ত্রী কোন্ অঘটন ঘটিয়ে বসে।দরবারের বাইরে এসে রাজা ভারী আনন্দ পেলো। মন্ত্রীকে বললোঃ চলো আমরা আরো সামনে এগিয়ে যাই।সামনে খোলা মাঠ, মাথার ওপর উন্মুক্ত আকাশ -- বেড়াবার খুব সখ হলো রাজার। ঘোড়া ছুটিয়ে উঁচু-নিচু পথ পেরিয়ে তারা এলো একটা বিশাল প্রান্তরে। এক পাশে সবুজ বন। বনের ধার ঘেঁষে বিরাট একটি দীঘি। এতক্ষণ পথ চলতে চলতে রোদের তাপে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল রাজা। দীঘির টলটলে জল দেখে তার ইচ্ছে করলে গোসল করতে। অমনি সে মন্ত্রীকে বললোর আমি গোসল করবো। তুমি জিনিসপত্র পাহাড়া দাও। মন্ত্রী বললো, জ্বি হুজুর, ঠিক হুজুর।রাজা মুকুট খুললল। সব পোষাক খুললো। নাইতে নামলো দীঘিতে। ঠাণ্ডা পানিতে শরীরটা জুড়িয়ে গেলো তার। আরাম পেয়ে আরো সামনে এগিয়ে গেলো সে। তার খেয়ালও রইলো না যে, সে সাঁতার জানে না। সামনে এগিয়ে যেতে যেতে গভীর পানিতে ডুবে যেতে লাগলো রাজা। অমনি সে চিৎকার দিয়ে মন্ত্রীকে ডাকলোঃ বাঁচাও -- বাঁচাও।মন্ত্রী বললো, জ্বি হুজুর, ঠিক হুজুর। সে একটুও নড়লো না। রাজাকে উদ্ধার করার নামও নিলো না। দাঁড়িয়ে থেকে কেবল বললো, জ্বি হুজুর, ঠিক হুজুর।এদিকে রাজা দাপাদাপি করতে করতে গভীর পানিতে ডুবে গেলো। মারা গেলে কিছুক্ষণের মধ্যেই।।মন্ত্রী আর কি করে। রাজার মুকুট পরলো। পোষাক পরলো। ফিরে এলো রাজধানীতে। সবাইকে জানিয়ে দিলো, এখন থেকে আমিই রাজা।নতুন রাজা পেয়ে প্রজারা খুশি না হলেও অত্যাচারী রাজার মৃত্যুতে স্বস্তি পেলো। তারা খুশি হলো। অত্যাচারী রাজার পরিণাম এমনই হয়ে থাকে।(শ্রীলংকার রুপকথা)

২ মাস আগে

Image

আট বছর আগে একদিন


আট বছর আগে একদিন – জীবনানন্দ দাশ শোনা গেল লাশকাটা ঘরেনিয়ে গেছে তারে;কাল রাতে ফাল্গুনের রাতের আধারেযখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাদমরিবার হল তার সাধ।বধু শুয়ে ছিল পাশে-শিশুটিও ছিল;প্রেম ছিল, আশা ছিল জোছনায় তবু সে দেখিলকোন্ ভূত? ঘুম কেন ভেঙে গেল তার?অথবা হয় নি ঘুম বহুকাল- লাশকাটা ঘরে মুয়ে ঘুমায় এবার।এই ঘুম চেয়েছিল বুঝি!রক্তফেনামাখা মুখে মড়কের ইঁদুরের মতো ঘাড় গুঁজিআঁধার ঘুঁজির বুকে ঘুমায় এবারকোনোদিন জাগিবে না আর।‘কোনদিন জাগিবে না আরজানিবার গাঢ় বেদনারঅবিরাম অবিরাম ভারসহিবে না আর-’এই কথা বলেছিল তারেচাঁদ ডুবে চলে গেলে অদ্ভুত আঁধারেযেন তার জানালার ধারেউটের গ্রীবার মতো কোনো এক নিত্বব্ধতা এসে।তবুও তো পেঁচা জাগে;গলিত স্থবির ব্যাঙ আরো দুই মুহূর্তের ভিক্ষা মাগেআরেকটি প্রভাতের ইশারায়–অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগে।টের পাই যূথচারী আঁধারের গাঢ় নিরুদ্দেশেচারি দিকে মশারির ক্ষমাহিন বিরুদ্ধতা;মশা তার অন্ধকার সঙ্ঘারামে জেগে থেকে জীবনের স্রোতে ভালোবাসে।রক্ত ক্লেদ বসা থেকে রৌদ্রে ফের উড়ে যায় মাছি;সোনালি রোদের ঢেউয়ে উড়ন্ত কীটের খেলা কত দেখিয়াছি।ঘনিষ্ঠ আকাশ যেন কোন্ বিকীর্ণ জীবনঅধিকার করে আছে ইহাদের মন:দুরন্ত শিশুর হাতে ফড়িঙের ঘর শিহরণমরণেরাসথে লড়িয়াছে;চাঁদ ডুবে গেলে পর প্রধান আঁধারে তুমি অশ্বত্থের কাছেএকা গাছা দড়ি হাতে গিয়েছিলে তবু একা একা;যে জীবন ফড়িঙের, দোয়েলের মানুষের সাতে তার হয় নাকো দেখাএই জেনে।অশ্বত্থের শাখাকরে নি কি প্রতিবাদ? জোনাকির ভিড় এসেসোনালি ফুলের স্নিগ্ধ ঝাঁকেকরে নি কি মাখামাখি?বলে নি কি: বুড়ি চাঁদ গেছে বুঝি বেনো জলে ভেসে?চমৎকার!ধরা যাক দু-একটা ইদুর এবার!জানায় নি পেচা এসে এ তুমুল গাঢ় সমাচার?জীবনের এই স্বাদ- সুপক্ক যবের ঘ্রাণ হেমন্তের বিকেলের-তোমার অসহ্য বোধ হল;মর্গে কি ওমোটেথ্যাঁতা ইঁদুরের মতো রক্তমাখা ঠোঁটে!শোনোতবু এ মৃতের গল্প;-কোনোনারীর প্রণয়ের ব্যর্থ হয় নাই;বিবাহিতা জীবনের সাধকোথাও রাখে নি কোনো খাদ,সময়ের উদবর্তনে উঠে এসে বধূমধু-আর মননের মধুদিয়েছে জানিতেহাড়হাভাতের গ্লানি বেদনার শীতেএ জীবন কোনোদিন কেঁপে ওঠে নাই;তাইলাশকাটা ঘরেচিৎ হয়ে শুয়ে আছে টেবিলের ‘পরে।জানি-তবু জানিনারীর হৃদয়-প্রেম-শিশু-গৃহ-নয় সবখানি;অর্থ নয়, র্কীতি নয়, সচ্ছলতা নয়-আরো এক বিপন্ন বিস্ময়আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরেখেলা করেআমাদের ক্লান্ত করে;ক্লান্ত ক্লান্ত করে:লাশকাটা ঘরেসেই ক্লান্তি নাই;তাইলাশকাটা ঘরেচিৎ হয়ে শুয়ে আছে টেবিলের ’পরে।তবু রোজ রাতে আমি চেয়ে দেখি, আহা,থুরথুরে অন্ধ পেচা অশ্বত্থের ডালে বসে এসেচোখ পালটায় কয়: বুড়ি চাঁদ গেছে বুঝি বেনো জলে ভেসে?চমৎকার!ধরা যাক দু একটা ইদুর এবার–হে প্রগাঢ় পিতামহী , আজও চমৎকার?আমিও তোকার মতো বুড়ো হব–বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেবকালীদহে বেনো জলে পার;আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার।

২ মাস আগে

Image

প্রথম অতিথি


কবিতা : প্রথম অতিথি- নির্মলেন্দু গুণএরকম বাংলাদেশ কখনো দেখোনি তুমি,মুহুর্তে সবুজ ঘাস পুড়ে যায়,ত্রাসের আগুন লেগে লাল হয়ে জ্বলে উঠে চাঁদ,নরম নদীর চর হা করা কবর হয়েগ্রাস করে পরম শত্রুকে,মিত্রকে জয়ের চিহ্ন, পদতলে প্রেম,ললাটে ধুলোর টিপ এঁকে দেয় মায়ের মতন,এরকম বাংলাদেশ কখনো দেখোনি তুমি।নদীর জলের সঙ্গে মানুষের রক্ত মিশে আছে,হিজল গাছের ছায়া বিপ্লবের সমান বয়সীরূপসী নারীর চুল ফূল নয়,গুচ্ছ গুচ্ছ শোকের প্রতীক,এরকম বাংলাদেশ কখনো দেখোনি তুমি,কখনো দেখেনি কেউ ।বাতাস – বাতাস শুধু নয়ত্রিশ লক্ষ মানুষের দীর্ঘশ্বাসময়আকাশ – আকাশ শুধু নয়এরকম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ নয়।এখানে প্রানের মুল্যে নদীর জলের মধ্যেআসে বান, টর্পেডো, টাইফুন, ঝড়কালবৈশাখীর দুরন্ত তুফানকোকিল – কোকিল শুধু নয়পাখি শুধু পাখি নয় গাছেবাউলের একতারা, উরুর অস্থির মতোযেন আগ্নেয়াস্ত্রে বারুদের মজ্জা মিশে আছে ।আজকাল গান শুধু গান নয়সব গান অভিমানপ্রানের চিৎকার বলে ক্রুদ্ধ মনে হয়এরকম বাংলাদেশ কখনো দেখেনি কেউতুমিই তার প্রথম অতিথি।

২ মাস আগে